ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।

যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।

পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com

এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই দুটি ওয়েবসাইটের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
www.islamidars.com

হযরতওয়ালা শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. এর বয়ান এবং সমস্ত কিতাব, প্রবন্ধ, মালফুযাত একসাথে ১টি অ্যাপে পেতে ইসলামী যিন্দেগী অ্যাপটি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন। Play Storeএবং  App Store

জামি‘আতুল আবরার রাহমানিয়া মাদ্রাসা

জামি‘আর পরিচিতিঃ

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের ব্যস্ততম এলাকা মোহাম্মাদপুরের ঐতিহাসিক সাত মসজিদকে পাশ কাটিয়ে বছিলা রোডের পাশেই সুবিশাল এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “জামি‘আতুল আবরার রাহমানিয়া মাদ্রাসা”। শতাব্দির মুজাদ্দিদ, মুসলিহুল উলামা হযরত সৈয়দ শাহ আবরারুল হক রহঃ এর অন্যতম খলিফা শাইখুল হাদীস ও জামি‘আর প্রধান মুফতী, মুফতী মনসূরুল হক দাঃবাঃ, দীন প্রতিষ্ঠায় নিজের জান দিতে প্রস্তুত এমন সাথীদের নিয়ে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় “জামি‘আতুল আবরার রাহমানিয়া মাদ্রাসা” প্রতিষ্টা করেন। বর্তমানে এই মাদ্রাসার অগনিত সুসন্তান (শাখা) রয়েছে যার প্রায় প্রতিটির মুরুব্বি হযরতওয়ালা শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দাঃবাঃ ।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ

ইংরেজ বেনিয়াদের ভারতবর্ষে আগমনের পূর্বে সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে একমাত্র মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে উপমহাদেশের জনগণকে সেই পথ নির্দেশ করা হত । কিন্তু এদেশে ইংরেজ অধিপত্য কায়েম হবার পরে তারা ইসলামী শিক্ষার প্রাণ কেন্দ্র, সেসব মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়ে পাশ্চাত্য ধাঁচের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ঈমান-আকীদা হরণের ষড়যন্ত্র শুরু করে । তাদের প্রবর্তিত এই শিক্ষা ব্যবস্থার বিষফল থেকে উপমহাদেশের সরল প্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার যথাযথ সংরক্ষণ এবং কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার যথাযথ সংরক্ষণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকা দেওবন্দে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দ।

প্রতিষ্ঠাতাদের ইখলাস ও কুরবানীর বদৌলতে অতি অল্প সময়ের মধ্যে কুরআন- হাদীসের জ্ঞান বিস্তার করে উপমহাদেশের সীমানা পেরিয়ে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বেও।আজ প্রায় দেড়শত বৎসর ধরে দারুল ঊলূম দেওবন্দ স্বীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অবিচল থেকে হাজার হাজার মহা পুরুষের জন্ম দিয়েছে । যারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন । আমাদের দেশে বর্তমানে যে হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসা রয়েছে সেগুলি এই দারুল উলূম দেওবন্দেরই বাস্তব আদর্শের প্রতীক । জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়াও বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দের পাঠ্যক্রমানুসারে পরিচালিত একটি শীর্ষ স্থানীয় বৃহত্তর ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।

জামি’আর কর্মধারাঃ

জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া সর্বাধিক ধর্মীয় শিক্ষা সম্বলিত একটি সপরিচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় । এর শিক্ষাক্রম শিশু শ্রেণী হতে শুরু করে সর্বোচ্চ ইসলামী শিক্ষা দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) এবং উচ্চতর শিক্ষা ইফতা কোর্স পর্যন্ত বিস্তৃত । এর ক্রমবিন্যস্ত শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে জামি’আয় পর্যায়ক্রমে কুরআন, হাদীস, ফিকহ, উসূল, আকাইদ ইত্যাদি এবং বৈষয়িক পর্যায়ে ব্যাকরণ সহ আরবী ও উর্দু সাহিত্যের মৌলিক কিতাবাদী বিশদভাবে শিক্ষা দেয়া হয় । এছাড়াও বাংলা, ইংরেজী, ফারসী, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, দর্শনসহ সমূদয় বিষয় প্রয়োজন পরিমাণ শিক্ষা দেয়া হয় । নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে আদর্শ ধর্মীয় নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জামি’আয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে । এছাড়া দেশের সর্বসাধারণের জন্যে দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দেয়ার লক্ষ্যে জামি’আর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকান্ডের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । এসব লক্ষ্য অর্জনে জামি’আর বর্তমানে তিনটি প্রকল্প রয়েছেঃ-

(১) শিক্ষা প্রকল্প।
(২) ছাত্র প্রশিক্ষণ কর্মসূচী।
(৩) সেবা প্রকল্প।

জামি’আর শিক্ষা প্রকল্পঃ এ প্রকল্পে মোট পাঁচটি বিভাগ রয়েছে-

১। মকতব বিভাগঃ এই বিভাগে শিশু প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূ্র্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক নূরানী ট্রেনিং পদ্ধতিতে মাত্র এক বছরে প্রয়োজনীয় মাসায়িল, দু‘আ-কালাম, উযু-নামায ইত্যাদির বাস্তব প্রশিক্ষণ সহ পবিত্র কুরআন শরীফ সহীহ শুদ্ধভাবে পড়ায় সক্ষম করে তোলা হয় এবং অর্থ সহকারে ৪০টি হাদীসের প্রশিক্ষণসহ সুন্দর ও সহীহভাবে কুরআন পাকের তেলাওয়াত ও আমপারা মুখস্থ করিয়ে দেয়া হয় । তৎসঙ্গে সহজ পদ্ধতিতে প্রাথমিক বাংলা, ইংরেজী, অংকও শেখানো হয় ।

২। হিফজ বিভাগঃ এ বিভাগে মক্তব প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছাত্রদেরকে অনূর্ধ্ব চার বছরে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ সহীহ শুদ্ধভাবে মুখস্ত করানো হয় । অতঃপর হিফজ সমাপনকারী ছাত্রদেরকে এবং কিতাব বিভাগে ভর্তিচ্ছু মক্তব প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছাত্রদেরকে কিতাব বিভাগে ভর্তির জন্য বিশেষ কোচিং করানো হয় ।

৩। কিতাব বিভাগঃ এটি জামি’আর পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সমৃদ্ধ প্রধান বিভাগ । এই বিভাগে মক্তব বা হিফজ শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদেরকে ইসলামী শিক্ষাক্রমের ক্লাশ পদ্ধতিতে মাত্র ১০ বছরে পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে কুরআন, হাদীস, ফিকহ, তাফসীর, আকাঈদ, আদব, নাহু, ছরফ, বালাগাত, মানতিক, হিকমত, ফালসাফাহ ইত্যাদি যাবতীয় ধর্মীয় বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী করে বিজ্ঞ আলেম রূপে গড়ে তোলা হয় এবং তাদেরকে সর্বব্যাপী দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দানের জন্য সনদ প্রদান করা হয় ।
দ্বীনী শিক্ষাক্রম মূল্যায়নের ভিত্তিতে কিতাব বিভাগটি মৌলিক পর্যায়ে পাঁচটি স্তরে বিভক্তঃ ইবতিদায়ী (প্রাথমিক), উস্তানী (মাধ্যমিক), সানাবী (উচ্চ মাধ্যমিক), নিহায়ী (ডিগ্রি), তাকমীল (মাষ্টার্স) । জামি’আর কিতাব বিভাগে উত্তীর্ণ আলেমগণ ‘মাওলানা’ উপাধী লাভ করেন ।

৪। ইফতা কোর্সঃ এটি সর্বোচ্চ তাকমীল ক্লাসের ইসলামী শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রদের জন্য তাখাস্‌সুস ফিল ফিকহ তথা ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ কোর্স । এই বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে দু বৎসরে দাওরায়ে হাদীস শ্রেণীর চুড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ আলিমদেরকে যুগ সমস্যার সমাধানে সহীহ ফতোওয়া প্রদানের যোগ্যতা সম্পন্ন করে ‘মুফতী’ সনদ প্রদান করা হয় ।

৫। তাকমীলু উলূমিল হাদীসঃ হাদীসের ভান্ডার বিশাল বিস্তৃত । হাদীসের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সহীহ, যঈফ, মওযু ইত্যাদি হাদীস সম্পর্কে পান্ডিত্য অর্জন করে সেই অনুযায়ী দিক নির্দেশনা প্রদান করা বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবী । এই দাবী পূরণের লক্ষ্যে জামি’আ কর্তৃপক্ষ এতদ সংক্রান্ত কয়েক লাখ টাকার কিতাব সংগ্রহ করে এই বিভাগ চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । এই বিভাগে ২ বৎসরের শিক্ষা কোর্সের মাধ্যমে হাদীস সম্পর্কে পারদর্শী করে গড়ে তোলা হয় ।

জামি’আর ছাত্র প্রশিক্ষণ কর্মসূচীঃ
ধারাবাহিক শিক্ষাক্রম ছাড়াও যুগ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জামি’আর পক্ষ থেকে ছাত্রদের জন্য বিশেষ অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয় । ছাত্রদেরকে আদর্শ দ্বীনী সমাজসেবক রূপে গড়ে তোলার জন্য জামি’আ নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করেছেঃ

ক) ছাত্র পাঠাগারঃ জামি’আর সিলেবাস ভুক্ত ধারাবাহিক শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি ছাত্রদের বহুমূখী জ্ঞানার্জন এবং দেশ ও জাতির সমকালীন অবস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগতি লাভের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্যবহুল বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা সমৃদ্ধ একটি উচুমানের পাঠাগারের ব্যবস্থা রয়েছে । শিক্ষানুরাগী ছাত্ররা ক্লাসিক্যাল লেখা-পড়ার অবসরে স্ব স্ব অভিরুচি মুতাবিক বই-পুস্তক সংগ্রহ করে যগোপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয় ।

খ) প্রতিযোগিতা মূলক বক্তৃতা প্রশিক্ষণঃ কুরআন-হাদীসের জ্ঞানার্জনের পর সর্ব-সাধারণের মাঝে দ্বীনী দাওয়াতের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের যোগ্যতা অর্জনের জন্য ছাত্রদের বাকশক্তি প্রস্ফুটিত করার লক্ষ্যে জামি’আর হলরুমে প্রতিযোগীতামূলক সাপ্তাহিক বক্তৃতা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে । যাতে শিক্ষানবীশ ছাত্ররা লোক সমাজে যে কোন বিষয়ের উপর সুন্দর সাবলীল আলোকপাত করতে পারে । এজন্য প্রতি বৃহস্পতি বার ওস্তাদদের বিশেষ তত্ত্বাবধানে পুরষ্কারের আয়োজন সহ যুগোপযোগী বিভিন্ন নির্ধারিত বিষয়ের উপর বক্তৃতা প্রতিযোগীতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ।

গ) মাসিক দেয়ালিকাঃ বর্তমানে দেশের সাহিত্য চর্চা এক শ্রেণীর কুচক্রীদের হাতে জিম্মী । পাশ্চাত্যমুখী বিকৃত রুচীর এসব কলম ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে ইসলামী সাহিত্যের স্বচ্ছ নির্মল জ্যোতি বিকিরণের লক্ষ্যে ছাত্রদেরকে যথাযথ ভাবে গড়ে তোলার জন্য লেখনীর উপর বিশেষ জোড় দেয়া হয় । নিয়মতান্ত্রিক ভাবে লেখা পড়ার সাথে সাথে বাংলা ও আরবী ভাষায় পারদর্শীতার মাধ্যমে রুচিশীল সাহিত্য চর্চার জন্য ছাত্রদের উদ্যোগে আরবী ও বাংলা দেয়ালিকা বৎসরে দু’বার প্রকাশ করা হয়।

ঘ) বিবিধ প্রশিক্ষণঃ সামাজিক অবক্ষয়ের এই দুযোগপূর্ণ মুহুর্তে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা হরণকারী সর্বপ্রকার বাতিল চক্রের মুখোশ উন্মোচন করে তাদের সম্পর্কে বাস্তব সত্য তুলে ধরার জন্য ছাত্রদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । এ প্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে সমকালীন ভ্রান্তবাদীদের আকীদা-বিশ্বাসের উপর অবগতি লাভ ও তার প্রতিকারের প্রশিক্ষণ স্বরূপ বিষয়ভিত্তিক নানাবিধ সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয় ।

ঙ) নামায ও কিরাআত প্রশিক্ষণঃ লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে সবরকম যোগ্যতা সম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ তরবিয়তের ব্যবস্থা করা হয় । তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজের প্রশিক্ষণ । ছাত্ররা নিজেদের নামায সহীহ করে জনসাধরণকেও যেন সহীহ আমলী মশক করাতে পারে সেই জন্যই এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা । অনুরূপভাবে পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াতকে সুন্দর থেকে সুন্দরতম করার লক্ষ্যে তিলাওয়াত প্রশিক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে । এতে প্রচলিত ভুল-ভ্রান্তি শুধরে দিয়ে সহীহ ও সুন্দররূপে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের বাস্তব শিক্ষা দেয়া হয় ।

জামি’আর সেবা প্রকল্পঃ এই প্রকল্পে ৫ টি বিভাগ রয়েছে:

ক) ফাতাওয়া বিভাগঃ এ বিভাগে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন অবস্থা/পরিস্থিতিকে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে যাবতীয় সমস্যার সঠিক ইসলামী সমাধান প্রদান করা হয় এবং জনসাধারণের পেশকৃত মাসআলা-মাসায়িল সম্পর্কিত সব ধরণের জটিল প্রশ্নের বিশদ জবাব প্রদান করা হয় । এছাড়া ইসলামী বিধান অনুযায়ী সময়োপযোগী শরীয়ত সম্মত পন্থা নির্ণয়ে যাবতীয় গবেষণা করা হয় ।

খ) ফারায়িজ বিভাগঃ এ বিভাগে মৃত ব্যক্তির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ওয়ারিসদের মধ্যে শরীয়তের বিধান মুতাবিক সুষ্ঠ বন্টনের রূপরেখা বর্ণনা করা হয় ।

গ) দাওয়াত ও তাবলীগ বিভাগঃ এ বিভাগের আওতায় ছাত্রদেরকে ইসলামী যিন্দেগী গঠন ও জনসমাজে দ্বীনী দাওয়াত প্রদানের বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় । এ পর্যায়ে ছাত্রদেরকে তাবলীগী জামা’আতের সাথে সম্পৃক্ত করে অসংখ্য ছাত্র দ্বারা তাবলীগী কার্যক্রম আঞ্জাম দেয়া হয় । প্রতি ছুটিতে অসংখ্য ছাত্র তাবলীগী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সেচ্ছায় সময় লাগানোর জন্য বের হয়ে থাকে । প্রতি সপ্তাহে ২৪ ঘন্টা সময় লাগানোর মাধ্যমে নিয়মিত সাপ্তাহিক তাবলীগী কর্মসূচি পালন করা হয় । এছাড়াও জামি’আর শিক্ষক মন্ডলীদের মধ্যে একজন করে শিক্ষক প্রতি বছর তাবলীগে ‘সাল’ লাগাচ্ছেন । এভাবে জামি’আ সার্বক্ষণিকভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে চলেছে ।

ঘ) মজলিসে দাওয়াতুল হকঃ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদেরকে দ্বীনী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের উপর পরিচালনার জন্য জামি’আর পক্ষথেকে হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর সিলসিলায় মাওলানা শাহ আবরারুল হক (রহঃ) কর্তৃক পরিচালিত মজলিসে দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী সুচারুরূপে আঞ্জাম দেয়া হয় । এর আওতায় সর্বসাধারণের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে তাদেরকে দ্বীন শেখানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয় । এই কার্যক্রমের সর্বাঙ্গিন সফলতার জন্য প্রতি ইংরেজী মাসের তৃতীয় শুক্রবার জামি’আ ভবনের মিলনায়তনে মাসিক জলসার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয় ।

ঙ) রচনা ও প্রকাশন বিভাগঃ বর্তমানে সাহিত্যাঙ্গন বিবেক বিকৃত, মগচ বেচা, পাশ্চাত্য ঘেঁষা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের দখলে । ফলে ইসলামী সাহিত্য মজলিস গুলি অসহায় হয়ে মুখ থুবরে পড়ছে ঐ অপসংস্কৃতিক হায়েনাদের কাছে । জামি’আ রাহমানিয়া দ্বীনের প্রত্যেক লাইনে যোগ্য কর্মী গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে । তারই দিক হল রচনা ও প্রকাশনা বিভাগ । এই বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন বিষয়ের পুস্তক-পুস্তিকা এবং লিটারেচার প্রকাশ ও প্রচার করা হয় ।

চ) দুঃস্থ মানবতার সেবাঃ জামি’আর ছাত্র কর্মীরা লেখা-পড়ার সাথে সাথে দুঃস্থ মানবতার সেবায় সর্বদা তৎপর থাকে । এ সূত্রে জামি’আর পার্শবর্তী এলাকার গরীব-দুঃখী ও অসহায় লোকদের মাঝে সম্ভাব্য পরিমাণ সাহাজ্য-সহযোগিতা প্রদান করা হয় । এছাড়া জামি’আর নির্দেশনায় প্রতি ছুটিতে ছাত্ররা নিজ নিজ এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে । উল্লেখিত বহুমূখী ব্যবস্থাপনা নিয়ে জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া একটি মহৎ পরিকল্পনা । সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা ও ধর্মীয় সেবা আঞ্জাম দানে জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া একটি ব্যতিক্রম ধর্মী ও অনন্য প্রতিষ্ঠান ।

জামিয়ার শিক্ষা সফলতাঃ
মাদ্রাসার অপর নাম “মানুষ গড়ার কারখানা” এর জলন্ত প্রমান এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করার ফলে অতি অল্প সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম-সুখ্যাতি বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এ প্রতিষ্ঠানটি উলামায়ে কেরাম ও সুধী মহলের নিকট ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। অপর দিকে সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর আ্ন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষাসমূহে বিভিন্ন মারহালায় মেধা তালিকায় সম্মানজক স্থান অধিকার করে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে আসছে।