ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য ক্লিক করুন

হযরতওয়ালা দা.বা. এর কিতাব অনলাইনের মাধ্যমে কিনতে চাইলে ভিজিট করুনঃ www.maktabatunnoor.com

হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

হযরতওয়ালা শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. এর বয়ান এবং সমস্ত কিতাব, প্রবন্ধ, মালফুযাত একসাথে ১টি অ্যাপে পেতে ইসলামী যিন্দেগী অ্যাপটি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন। Play Storeএবং  App Store

জুমাদাল উলা মাসের করণীয় বর্জনীয়

মুসলমান আমল থেকে কখনো খালি থাকে না। প্রতিটি মূহুর্ত তার আমলে কাটে। একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় আমলহলো মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর অটল থাকা। সময়ের দিকে লক্ষ্য করে এই মাসে বিশেষ কোন আমল না থাকায় মুমিনের সবচেয়ে মূলবান জিনিস ঈমান-আক্বীদার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

তাওহীদ-রিসালাতের হাকীকত ও তাৎপর্য

مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ

তরজমা; ‘হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার রাসূল এবং তার সাথীগণ কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদেরে মাঝে পরস্পর সহানুভূতিশীল।’ (সুরা ফাতহ:২৯)

বর্ণিত আয়াত হুদাইবিয়ার সন্ধির পরে নাযিল হয়। হুদাইবিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলে ঘোষণা করা হয়। যদিও বাহ্যিক ভাবে বিজয়ের কোন চিহ্ন তাতে বিদ্যমান ছিল না। যে কারণে হযরত উমর ফারুক রাযি. সহ অন্যান্য সাহাবীগণ এ সন্ধির ব্যাপারে খুবই পেরেশান ছিলেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা এ সন্ধির অনেক হেকমত প্রকাশ করলেন। সুলহে হুদাইবিয়ার পরপরই খাইবার বিজয় হয়ে গেলো। প্রচুর গনীমত মুসলমানদের হাতে এসে এতদিনের আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। অপর দিকে ইয়াহুদী জাতি সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হলো এবং সময়ের ব্যবধানে মক্কা বিজয় হয়ে চরম ও পরম লক্ষ্য অর্জিত হলো।

হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্র প্রস্তুতকালে কাফেরদের অযৌক্তিক শর্ত

সুলাহনামা (সন্ধিপত্র) প্রস্তুতলগ্নে মক্কায় কাফেরদের পক্ষ থেকে অনেকগুলো অবাঞ্ছিত কার্য ও অযৌক্তিক শর্ত উত্থাপিত হয়েছিল। তার মধ্যে তাদের দু‘একটি উল্লেখযোগ্য কার্যকলাপ হলো সুলাহানামার শুরুতে হযরত আলী রাযি. ‘বিসমিল্লাহ’ শরীফ লিখেছিলেন। কিন্তু কাফেররা তা মানলো না। তারা বরং বলে বসলো-রহমান কে? তাকে আমরা চিনি না। সুতরাং আমাদের নিয়ম মতো “বিসমিকা আল্লাহুম্মা” লিখতে হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে তাই লেখা হলো। তারপর হযরত আলী রাযি. লিখলেন-এটা একটি চুক্তিনামা, যা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের সাথে সম্পাদন করলেন। কাফেররা এতে আপত্তি করে বসলো যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি আমারা আল্লাহর রাসূল মেনেই নেই, তাহলে তার সাথে আমাদের বিবাদ কিসের? তাহলে তো সমস্ত ঝগড়ার অবসান হয়ে যায়। সুতরাং উক্ত রাসূলুল্লাহ শব্দের স্থলে ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ’ লিখতে হবে।

এ দাবি নিয়ে তারা খুবই পীড়াপীড়ি ও বাড়াবাড়ি করতে লাগলো। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে তাদের দাবি মেনে নিয়ে ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি মুছে ফেলা হলো এবং তদস্থলে “বিন আব্দুল্লাহ” লেখা হলো। দ্বীনের স্বার্থে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিনয় ও নম্রতার এই প্রকাশ আল্লাহ তা‘আলার দরবারে সমাদৃত হলো। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিধান [যে ব্যাক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন] অনুযায়ী এ আয়াতের মধ্যে বিশেষভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামের সাথে রাসূলুল্লাহ্ শব্দ নাযিল করে চিরস্থায়ী করে দিলেন-যা কিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষ কর্তৃক লিখিত ও পঠিত হতে থাকবে।

মুহাম্মাদ নামের সার্থকতা

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন নামে ভূষিত করেছেন। তার মধ্যে ‘মুহাম্মাদ’ নামটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নামটি আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে পাকের চার স্থানে উল্লেখ করেছেন এবং এ নামটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মের পূর্বেই তাঁর দাদা খাজা আব্দুল মুত্তালিবকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল। আর এ নামের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হবে হাশরের ময়দানে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সকল মানুষের জন্য সুপারিশের লক্ষ্যে মাকামে মাহমূদে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা সেই সুপারিশ কবুল করে হিসাব শুরু করবেন। ইতিপূর্বে সব মানুষ সকল বড় বড় রাসূল আ. গণের দরবারে গিয়ে ফিরে আসবে, কেউ তাদের সুপারিশের যিম্মাদারী নিতে সাহস করবেন না, ঠিক এমনই মুহূর্তে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফা‘আতের যিম্মাদারী গ্রহণ করায় এবং শাফা‘আত করায় দুনিয়ার শুরুলগ্ন থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষের দুনিয়াতে আবির্ভাব ঘটেছে, সকলে একবাক্যে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবেন। তখন মুহাম্মাদ অর্থাৎ প্রশংসিত নামের পূর্ণপ্রকাশ ঘটবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরেক নাম ‘আহমাদ’ অর্থ- সকলের চেয়ে বেশী প্রশংসাকারী। বাস্তবিক পক্ষে তিনি আল্লাহ তা‘আলার জন্য সবচেয়ে বেশী কুরবানী করেছেন এবং জান-মাল দিয়ে আল্লাহর সবচেয়ে বেশী প্রশংসা করেছেন। তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলার এই বিধান বাস্তবায়িত হবে যে, দুনিয়াতে যে যত বেশী আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করবে, তার দ্বীনের জন্য যত বেশী কুরবানী করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতে ও আখিরাতে ততবেশী প্রশংসিত ও মর্যাদাশীল করবেন। তায়েফের জুলুম ও অত্যাচারের পরক্ষণেই মিরাজে আল্লাহ তা‘আলার দীদার ও সান্নিধ্য লাভ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আল্লাহ তা‘আলা বান্দার কুরবানী, ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট-তাকলীফ বরদাশত ইত্যাদিও কড়া ক্রান্তি হিসাব রাখেন এবং বান্দাকে সেই অনুপাত বরং তার চেয়ে অনেক বেশী প্রতিদান দিয়ে থাকেন।

কালিমা তাইয়্যেবা ও তার দাবি

আয়াতের প্রথম অংশটুকু কালিমায়ে তাইয়্যেবা [“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”]-এর দ্বিতীয় অংশ বটে। আর কালিমা তাইয়্যেবার প্রথমাংশও বিভিন্ন আয়াতের মধ্যে উল্লেখ আছে। প্রথমাংশের মাধ্যমে  আল্লাহ তা‘আলার সাথে আমরা ওয়াদাবদ্ধ হয়ে যাই যে, আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোন মা’বুদ নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় বা অন্য কাউকে ইবাদত করার কোন সুযোগ নেই। কারণ স্পষ্ট। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা। তিনিই আমাদের কল্যাণার্থে যা কিছু দরকার সব কিছুই সম্পন্ন করেছেন, দিয়েছেন। তিনি সমস্ত উত্তম গুণের পরিপূর্ণ অধিকারী। কোন দোষ-ত্রুটি তাঁর ধাওে কাছে ঘেষতে পারেনা। তার ফয়সালা ব্যতীত অন্য কারো হাতে আমাদের উপকার বা অপকারের সামান্যতম ক্ষমতাও প্রদান করা হয়নি। সৃষ্টজীব দ্বারা বাহ্যিক ভাবে আমাদের কোন কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধিত হলে সেটা মূলত আমাদের কর্মফলের ভিত্তিতে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলার সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মাখলুক ও সৃষ্টজীবের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। তার ভিতরে যে ক্ষমতা বা তাছীর আমরা লক্ষ্য করি, তা মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলারই দেয়া ক্ষমতা এবং সে ঐক্ষমতা প্রকাশ করতেও আল্লাহর হুকুমের মুখাপেক্ষী। এ কারণেই আগুনেই আগুনের জ্বালানোর ক্ষমতা সর্বক্ষণ জারী থাকা সত্ত্বেও হযরত ইবরাহীম আ. কে আগুন জ্বালাতে পারেনি। বরং আরাম ও শান্তি দিয়েছিল। ধারালো ছুরির ভিতরে সব সময় কাটার ক্ষমতা লক্ষ্য করা গেলেও ঐ ছুরি ইসমাইল আ. কে কাটেনি। পানির ভিতরে ডুবানো ক্ষমতা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বে ঐ পানি হযরত মূসা আ.-এর বাহিনীকে ডুবায়নি। সাহাবী হযরত আলা ইবনুল হাযরামী রাযি.-এর সেনাদলকে ডুবায়নি। এসবের একটাই কারণ, মাখলুক বা সৃষ্টজীব তার ক্ষমতা প্রকাশ করতে হলে ক্ষমতাদানকারী আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের মুহতাজ হয়। তিনি নিষেধাজ্ঞা জারী করলে, কোন মাখলুকের কোন ক্ষমতা প্রকাশ পেতে পারে না।

উপকার বা অপকার করার মালিক একমাত্র আল্লাহ

এজন্য নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. কে বললেন- হে ইবনে আব্বাস! সমগ্র দুনিয়ার মাখলুকাত যদি তোমার কোন কল্যাণ বা ক্ষতি করতে চায় অথচ আল্লাহ তা‘আলা যদি না চান, তাহলে মাখলুক তোমার বিন্দুমাত্র উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমার উপকার বা ক্ষতি করার সিদ্ধান্ত করেন তাহলে সমগ্র মাখলুক একত্র হয়ে তা বন্ধ করতে সক্ষম হবে না। (সূরায়ে ইউনুস-১০৭)

সারকথা, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপকার বা অপকার সাধনে কারো মুখাপেক্ষী নন। কিন্তু মাখলুক কারো উপকার বা অপকার করতে সম্পূর্ণ ভাবে আল্লাহ তা‘আলার মুখাপেক্ষী।

সম্পূর্ণ অংশ ডাউনলোড করে পড়ুন