ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য ক্লিক করুন।
হযরতওয়ালা দা.বা. এর কিতাব অনলাইনের মাধ্যমে কিনতে চাইলে ভিজিট করুনঃ www.maktabatunnoor.com
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন।
লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের গুরুত্ব
عَنْ جَرِيرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « مَا مِنْ رَجُلٍ يَكُونُ فِى قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِى يَقْدِرُونَ عَلَى أَنْ يُغَيِّرُوا عَلَيْهِ فَلاَ يُغَيِّرُوا إِلاَّ أَصَابَهُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَمُوتُوا » [سنن أبي داود حـ:٤٣٤١]
হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : যদি কোন ব্যক্তি বা জাতীর মধ্যে কোন ব্যক্তি কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় এবং ঐ কওম বা জামা‘আতের মধ্যে শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে উক্ত গুনাহ হতে বাধা না দেয়, তবে মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতেই তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসে যায়। (আবূ দাউদ, হাদীস নং-৪৩৩৯)
কুতুবুল আলম শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া রহ. বলেন : হে আমার মুখলিস বুযুর্গ এবং ইসলাম ও মুসলমানের উন্নতিকামী বন্ধুগণ ! ইহাই হল মুসলমানদের ধ্বংস ও ক্রমবর্ধমান অবনতির কারণ। প্রত্যেক ব্যক্তি অপরিচিত ও সমপর্যায় লোকদেরকে নয় বরং আপন পরবার পরিজন, সন্তান-সন্ততি, অধীনস্থ ও ছোটদের প্রতি একটু লক্ষ্য করে দেখুন। তারা কি পরিমাণ প্রকাশ্য গুনাহের মধ্যে লিপ্ত আছে; আর আপনারা নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দ্বারা তাদেরকে বাধা প্রদান করছেন কিনা। বাধা দেওয়ার কথা বাদ দিন, বাধা দেওয়ার এরাদাই বা করেন কিনা। অথবা এই আশংকা আপনার মনে আসে কিনা যে, আমার প্রিয় পুত্র কি করছে। যদি সে সরকারের বিরুদ্ধে কোন অন্যায় কাজ করে বা অপরাধও নয় শুধু সরকার বিরোধী কোন রাজনৈতিক সভা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে, তবে আপনিও তাতে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে চিন্তিত হয়ে যান। তাকে শাসন করা হয় এবং নিজে নির্দোষ ও দায়মুক্ত থাকার জন্য বিভিন্ন রকম তাদবীর করা হয়। কিন্তু আহকামুল হাকেমীন আল্লাহর নাফরমানের সাথেও কি সেই আচরণ করা হয় যা এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার নগণ্য সরকারী অপরাধীর সাথে করা হয়।
আপনি ভাল করেই জানেন আপনার প্রিয় পুত্র দাবা খেলায় আসক্ত, তাসখেলায় (টি ভি, ভি সি আর এর মধ্যে) ডুবে থাকে, কয়েক ওয়াক্তের নামায ছেড়ে দেয়। কিন্তু আফসোস! কখনও আপনার মুখ হতে ভুলেও এই কথা বের হয় না যে, বেটা! কি করছ? এ তো মুসলমানের কাজ নয়। অথচ তার সাথে খানাপিনাও ছেড়ে দেওয়ার হুকুম ছিল।
এমন অনেক লোক পাওয়া যাবে, যারা ছেলের উপর এই জন্য নারাজ যে, ছেলে অলস ও ঘরে বসে থাকে; চাকরির চেষ্টা করে না অথবা দোকানের কাজে মনোযোগ দেয়া না; কিন্তু এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে যারা ছেলের উপর এই জন্য নারাজ যে, সে জামাআ‘তে নামায আদায় করে না কিংবা নামায কাযা করে দেয়।
বুযুর্গ ও বন্ধুগণ! দীনের প্রতি উদাসীনতা যদি শুধু আখেরাতের জন্যই ক্ষতিকর হতো তবুও ইহা হতে বহুদূরে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সর্বনাশ তো এই যে, যে দুনিয়াকে আমরা কার্যত আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকি, সেই দুনিয়ার ধ্বংসও দীনের প্রতি এই উদাসীনতার কারণেই হচ্ছে। চিন্তা করুন- এই অন্ধত্বের কি কোন সীমা আছে?
({وَمَنْ كَانَ فِي هَذِهِ أَعْمَى فَهُوَ فِي الْآخِرَةِ أَعْمَى وَأَضَلُّ سَبِيلًا} [الإسراء :٧٢])
অর্থাৎ, এই দুনিয়াতে (দীনের ব্যাপারে) যারা অন্ধ থাকবে তারা আখেরাতেও অন্ধ থাকবে। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ৭২)
আসল কথা, যেন এই আয়াতের প্রতিচ্ছবি- {خَتَمَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ} [البقرة : ٧]
অর্থাৎ, আল্লাহ তাআ‘লা তাদের অন্তর ও তাদের কানের উপর সিল-মোহর মেরে দিয়াছেন এবং তাদের চোখের উপর পর্দা পড়ে আছে। (সূরা বাকারা, আয়াত-৭)
وروي عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال لا تزال لا إله إلا الله تنفع من قالها وترد عنهم العذاب والنقمة ما لم يستخفوا بحقها قالوا يا رسول الله وما الاستخفاف بحقها قال يظهر العمل بمعاصي الله فلا ينكر ولا يغير. رواه الأصبهاني أيضا. [الترغيب والترهيب حـ:٣٤٩٨
(২) হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: কালেমায়ে তাওহীদ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু (মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) ইহার পাঠকারীকে সর্বদা উপকার করতে থাকে এবং তার উপর হতে আযাব ও বালা-মুসীবত দূর করতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত উহার হক আদায়ের ব্যাপারে বেপরোয়াভাব ও অবহেলা না করা হয়। সাহাবীগণ রাযি. আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উহার হক আদায়ের ব্যাপারে বেপরোয়াভাব ও অবহেলা না করার অর্থ কি? উত্তরে হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন : প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানী করা হয়, আর উহাকে বন্ধ করার কোন চেষ্টা করা হয় না। (তারগীব : ইসবাহানী)
এখন আপনিই একটু ইনসাফ করে বলুন, বর্তমানে আল্লাহর নাফরমানীর কি কোন সীমারেখা আছে? এবং উহাকে বাধা দেওয়ার অথবা বন্ধ করার কিংবা কিছুটা কমিয়ে আনার কি কোন চেষ্টা চলছে? নিশ্চয়ই না। এরূপ ভয়াবহ অবস্থায় মুসলমান যে জগতের বুকে টিকে আছে তাই আল্লাহ তাআ‘আলার বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহমাত্র। নতুবা আমরা আমাদের ধ্বংসের জন্য কোন কাজটি করতে বাকী রেখেছি?
হযরত আয়েশা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, দুনিয়াবাসীর উপর যদি আল্লাহর আযাব নাযিল হয় এবং সেখানে কিছু দীনদার লোকও থাকেন, তবে তাদেরও কি কোন ক্ষতি হবে? হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন: নিয়াতে তো সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কিন্তু আখেরাতে তারা গুনাহগারদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে। অতএব, ঐ সমস্ত লোক যারা নিজেদের ধর্ম-কর্মের উপর নিশ্চিন্ত হয়ে লোক সমাজ হতে দূরে সরে নির্জনে বসে রয়েছেন, তারা যেন তা হতে বে-ফিকির না থাকেন। কেননা, খোদা না করুন, যদি পাপের ব্যাপকতার কারণে কোন আযাব এসে পড়ে তবে তাদেরকেও এর স্বাদ ভোগ করতে হবে। (শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহ. কৃত ফাযায়েলে তাবলীগ থেকে সংগৃহীত)