ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।

যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।

পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com

এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই দুটি ওয়েবসাইটের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
www.islamidars.com

হযরতওয়ালা শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. এর বয়ান এবং সমস্ত কিতাব, প্রবন্ধ, মালফুযাত একসাথে ১টি অ্যাপে পেতে ইসলামী যিন্দেগী অ্যাপটি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন। Play Storeএবং  App Store

জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব

জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করার ব্যাপারে শরী‘আতে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

(ক) কুরআনে কারীমে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। অর্থাৎ, মসজিদে জামা‘আতের সাথে নামায আদায় কর। (সূরা বাকারা, ৪৩, তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড ৮৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাজহারী-১/৬৩)

জামাআতের গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস     

(খ) হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ স্বত্তার কসম যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, আমার মনে চায় যে লোকদেরকে প্রথমে কাষ্ঠ সংগ্রহের নির্দেশ দেই, অতঃপর একজনকে জামা‘আত কায়িম করার হুকুম দেই এরপর ঐ সকল পুরুষদের কাছে যাই যারা জামা‘আতে হাজির হয়নি এবং তাদের ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬৪৪)

(গ) হযরত আবু হুরায়রা রাযি.-এর সূত্রে বর্ণিত, এক অন্ধ ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার এমন কোন সাহায্যকারী নেই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। এই বলে তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ঘরে নামায পড়ার অনুমতি চাইলেন । প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। কিন্তু পরক্ষণই তাঁর চলে যাওয়ার মুহূর্তে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাস করলেন, তুমি কি আযান শোন? তিনি জওয়াব দিলেন হ্যাঁ। আযান শুনতে পাই। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তাহলে তুমি মসজিদে এসে জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করবে। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং-৬৫৩)

উল্লেখ্য যে, অন্ধ ব্যক্তির জন্য জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া জরুরী না থাকা সত্ত্বেও জামা‘আতের গুরুত্ব বুঝনোর জন্য এবং বিশিষ্ট সাহাবী হওয়ার কারণে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জামা‘আতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

(ঘ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, আমাদের যুগে আমি দেখেছি যে, প্রকাশ্য মুনাফিক এবং অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া কেউ জামা‘আত ত্যাগ করত না। এমনকি কোন অসুস্থ ব্যক্তি যদি দুই জনের কাঁধে ভর করে হাটতে পারত তবে সেও মসজিদে এসে জামা‘আতে শরীক হত। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং-৬৫৪)

জামাআতে নামায পড়ার ফযীলত

(১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জামা‘আতের সাথে আদায়কৃত নামায একাকী নামাযের চেয়ে ২৭ গুন বেশী ফযীলতপূর্ণ। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬৪৫)

(২) হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাযি.-এর সূত্রে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইশার নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্ধরাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল, সে যেন সারারাত নামায পড়ল। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৬৫৬)

(৩) হযরত আনাস রাযি.-এর সূত্রে অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য লাগাতার ৪০ দিন ক্রমাগত তাকবীরে উলার সাথে জামা‘আতে নামায আদায় করবে, তার জন্য দুটি সনদ লিখে দেয়া হবে, ১টি হল তার জাহান্নাম থেকে মুক্তির। অপরটি হল মুনাফেকীর ফিরিস্তি থেকে মুক্তির। (তিরমিযী শরীফ হাদীস নং-২৪১)

(৪) হযরত আবু মূসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত- অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে যতদূরে অবস্থান করে, সে দূর থেকে মসজিদে আসার দরুন ততবেশী সওয়ারে অধিকারী হবে। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬৫১, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৬৬২)

(৫) হযরত আবু উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত- অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঘর থেকে উযূ করে ফরয নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদ পানে রওনা হল, সে ইহরাম বেঁধে গমনকারীর প্রাপ্ত সওয়াবের পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হবে। (আবূ দাউদ শরীফ হাদিস নং ৫৫৮)

জামাআতের সাথে নামায আদায়ের কিছু উপকারিতা

(১) দীনী মাসাইল ইত্যাদি সম্পর্কে অনবগত লোকেরা উলামায়ে কিরাম থেকে দীন শিক্ষা করতে পারে।

(২) মুসলমানদের মধ্যে পরস্পরে ভ্রাতৃত্ববোধ ও আন্তরিকতার সৃষ্টি হয়।

(৩) ধনী ব্যক্তিরা অভাবীদের অবস্থা ও প্রয়োজনাদি সম্পর্কে সহজে অবগতি লাভ করেত পারে।

(৪) মুসলমানদের মধ্যে সাম্য ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৫) বিধর্মীদের উপর মুসলমানদের প্রভাব সৃষ্টি হয় ইত্যাদি। (আলবাহরুর রায়েক ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬০৬।) ফতওয়ায়ে শামী-১/৫৫১, মারাকিল ফালাহ-১৫৬)

জামাত ত্যাগকারীদের ব্যাপারে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সতর্ক বাণী

১। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, যে ব্যক্তিকে এ কথা আনন্দ দান করে যে কাল কিয়ামতের দিন সে মুসলমান হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার সহিত মিলিত হবে সে যেন ফরয নামায সমূহকে এমন স্থানে আদায়ের ইহতিমাম করে যেখানে আযান দেয়া হয় অর্থাৎ, মসজিদে, কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য এমন সুন্নাতসমূহ জারী করেছেন, যা হিদায়াতপূর্ণ। আর জামা‘আতের সাথে নামায আদায় নিশ্চিতরূপে সুনানে হুদা তথা হিদায়াতের আলোদানকারী সুন্নাতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যদি তোমরা ঐ সকল লোকদের অর্থাৎ, মুনাফিকদের ন্যায় গৃহাভ্যন্তরে নামায পড়তে আরম্ভ কর তাহলে তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতকে ছেড়ে দিলে। আর যদি তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতকে ছেড়ে দাও তাহলে নিশ্চিতভাবে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং-৬৫৪)

২. হযরত আবু দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে গ্রামে বা মাঠে তিনজন লোক থাকে অথচ তারা সেখানে জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করে না, শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে, সুতরাং তোমরা জামা‘আতকে জরুরী মনে কর, কেননা দলত্যাগী বকরীকে বাঘে খেয়ে ফেলে। (আবু দাউদ শরীফ হাদীস নং-৫৪৭, মুস্তাদরাকে হাকেম হাদীস নং-৯০০, মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং-২৭৫৮২)

৩. হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আযান শুনল অত:পর কোন শরয়ী উযর না থাকা সত্ত্বেও মসজিদে আসল না, তার নামায কবূল হবে না। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন উযর কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন অসুস্থতা বা ভয়ভীতি। (আবু দাউদ শরীফ হাদীস নং-৫৫১, মুস্তাদরাকে হাকেম হাদীস নং-৮৯৬, ইবনে মাজা হাদীস নং-৭৯৩)

৪. হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাযি. থেকে বর্ণিত- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: হয়তো লোকেরা জামা‘আত তরক করা থেকে বিরত হোক, না হয় তাদের ঘর-বাড়ীগুলো জ্বালিয়ে দিব। (ইবনে মাজা হাদীস নং-৭৯৫)

পর্যালোচনা

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসসমূহের আলোতে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করা ফরযে আইন বলেছেন, এবং ইমাম শাফেয়ী রহ. ফরযে কেফায়া বলেছেন। আর ইমাম আযম আবূ হানিফা রহ. সক্ষম পুরুষদের জন্য জামা‘আতকে ওয়াজিব বলেছেন। হানাফী মাযহাবের কোন কোন কিতাবে জামা‘আতকে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ বলা হলেও বিশুদ্ধ ও মজবুত মতানুযায়ী তার অর্থ হল মজবুত এবং শক্তিশালী হাদীস  ও সুন্নাতের মাধ্যমে জামা‘আতে শরীক হওয়া ওয়াজিব প্রমাণিত। (আলবাহরুর রায়েক-১/৬০২, আল ফিকহুল ইসলামী-২/১১৬৭, শামী-১/৫৫২, বাদায়ে-১/১৫৫, ফাতহুল কাদীর-১/৩০০, মাহমুদিয়া-৭/১৩১, আলমগীরী-১/৫৩, রহীমিয়া-১/২১৩)

সুতরাং জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করার ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব প্রদান করা জরুরী। বর্তমানে অধিকাংশ লোকেরা জামা‘আতের ব্যাপারে যে অলসতা করছে এবং ঘরে বা দোকানে অফিসে একাকী নামায পড়ে নিচ্ছে তা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতা। আর নামায তরক করাতো কুফরী কাজ, যা কোন মুসলমানের জন্যই শোভা পায় না। আল্লাহ তাআলা সকল মুসলমানকে নামাযী হওয়ার এবং সক্ষম পুরুষদেরকে জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

যে সমস্ত উযরের কারণে জামাআত তরক করা জায়েয

(১) প্রবল বৃষ্টি (২) অতিরিক্ত ঠাণ্ডা (৩) হিংস্র জন্তু বা ডাকাতের ভয়-ভীতি (৪) ঘুটঘুটে অন্ধকার (৫) বন্দীত্ব (৬) অন্ধত্ব (৭) পঙ্গুত্ব (৮) হাত পা না থাকা (৯) ভীষণ অসুস্থতা (১০) চলতে অক্ষম হওয়া (১১) রাস্তা কাদাযুক্ত হওয়া (১২) খোড়া হওয়া (১৩) অতিরিক্ত বার্ধক্য (১৪) ফিকহ শাস্ত্রের পাঠ্য আলোচনায় লিপ্ত থাকা (১৫) অতিরিক্ত ক্ষুধার সময় খাদ্য উপস্থিত থাকলে (১৬) সফরের ইচ্ছা করা ও তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া (১৭) রোগীর শুশ্রূষা করা (১৮) প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হওয়া। (নূরুল ঈজাহ-৭৯, তাহতাবী-১৬২/১৬৩, তোহফায়ে আবরার-৭৭)