ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪শে শাবান, ১৪৪৪ হিজরী, ১৭ই মার্চ, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য ক্লিক করুন।
হযরতওয়ালা দা.বা. এর কিতাব অনলাইনের মাধ্যমে কিনতে চাইলে ভিজিট করুনঃ www.maktabatunnoor.com
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন।
লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
লা মাযহাবী বন্ধুরা! দয়া করে জবাব দিবেন কি?
আহলে হাদীস নামধারী লা-মাযহাবী বন্ধুরা সেই যে ১৮৭৯ সাল থেকে ‘চ্যালেঞ্জ, ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ আর রুপি-টাকার টোপ সংবলিত লিফলেট প্রকাশ করে আসছেন তার আর থামাথামি নেই; থামার লক্ষণও নেই। পার্থক্য এতটুকু যে, সেকালের দশ রুপি একালে এসে লাখের ঘর ছাড়িয়েছে। এ সব লিফলেটে তারা উম্মাহর প্রথম সারির উলামায়ে কেরাম ও মাযহাবের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমামগণের প্রতি লাগামহীন বিষেদগার করে থাকে। পাশাপাশি উম্মতের সর্ববাদী দীনী সিদ্ধান্ত ও ‘আমালুল মুতাওয়ারাস’ তথা প্রজন্ম পরস্পরায় নির্দ্বিধায় পালিত বিভিন্ন আমলের প্রামাণ্যতার বিরুদ্ধে বাহারী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। তাদের এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় সরলমনা সাধারণ দীনদার ভাইয়েরা-যারা কুরআন সুন্নাহর বিশেষজ্ঞ নন-দোটানায় পড়ে যান এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিভ্রান্তও হন। মুসলিম জনসাধারণের ঈমান-আমল হেফাযতের উদ্দেশ্যে তাদের লিফলেটবাজির জবাবে সর্বপ্রথম কলম লেগেছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম সন্তান শাইখুল হিন্দ হযরত দেওবন্দী রহ.। তাঁর লিখিত ‘আদিল্লায়ে কামিলাহ’ ও ‘ঈযাহুল আদিল্লাহ’ ওদের দাঁতই ভেঙ্গে দেয়নি; মাঢ়ি-চোয়ালও আলগা করে দিয়েছিল। যার জবাব আজ ১৩৫ বছর পর্যন্তও ওরা দিতে সক্ষম হয়নি, ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সক্ষম হবেও না। কিন্তু যার যা স্বভাব- ওরা লিফলেটবাজি বন্ধ করেনি। সেই ধারাবাহিকতায় শুধুমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার দাবীদার (ইজমা, কিয়াস নয়) লা-মাযহাবী বন্ধুদের নিকট আমরা কিছু প্রশ্ন রাখছি। প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব এদেশের দীনদরদি প্রতিটি মুসলমানই আন্তরিকভাবে কামনা করে।
প্রশ্ন-১. আমাদের হাদীস মানতে হবে- এ বিষয়ে একটি সুষ্পষ্ট ও সহীহ হাদীস পেশ করুন (দয়া করে সুন্নাহ মানার হাদীসকে হাদীস মানার হাদীস হিসেবে চালিয়ে দিবেন না)।
প্রশ্ন-২. একটি সহীহ হাদীসের মাধ্যমে সহীহ হাদীসের সংজ্ঞা পেশ করুন।
প্রশ্ন-৩. হাদীস ও সুন্নাহ কি একই জিনিস? রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হাদীস মানতে বলেছেন নাকি সুন্নাহ মানতে বলেছেন? প্রমাণসহ বলুন।
প্রশ্ন-৪. ইজমা ও কিয়াস শরীয়তের দলীল হওয়ার বিষয়টি কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا ﴿١١٥﴾
অর্থ: কারও নিকট হিদায়াতের পথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুস্বরণ করে, তবে আমি তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দিব যেদিকে সে ফিরে যায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা বড় মন্দ আবাস। (সূরা নিসা, আয়াত নং-১১৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّـهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّـهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ﴿٥٩﴾
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে দ্বায়িত্বশীল। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা পেশ কর আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট যদি তোমরা আখিরাতে বিশ্বাস কর। এটাই উত্তম ও পরিণামে প্রকৃষ্টতর। (সূরা নিসা, আয়াত নং-৫৯)
সুতরাং আপনারা যে ইজমা, কিয়াসকে শরীয়তের দলীল মানেন না, যার ফলে কুরআনের এ সব আয়াতকে অস্বীকার করা হয়, এতে আপনাদের ঈমানের ব্যাপারে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী?
প্রশ্ন-৫. ইজমা ও কিয়াসের আশ্রয় নেয়া ছাড়া সরাসরি কুরআন-হাদীসের ভাষ্য দ্বারা নিম্নোক্ত আধুনিক মাসআলাগুলোর সমাধান পেশ করুন।
যদি কুরআন হাদীসের সুষ্পষ্ট ভাষ্য দ্বারা এর উত্তর দিতে না পারেন তাহলে
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّـهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌ ۗ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ ۚ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ ۙ فَإِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿٣﴾
“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম … … … …” এ আয়াতের প্রেক্ষিতে দীন কীভাবে পূর্ণাঙ্গ হল তা শুধুমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করুন।
প্রশ্ন-৬. আপনাদের লেখা তাফসীর-উসূলে তাফসীর, হাদীস-উসূলে হাদীস, ফিকহ ও উসূলে ফিকহের কোন কিতাব আছে কি? থাকলে সেগুলোর নাম-ধাম ও কোন সালে তা লিখা হয়েছে জানিয়ে বাধিত করুন।
প্রশ্ন-৭. আপনাদের দাবী হল আপনারা সহীহ বুখারী মানেন। তো প্রশ্ন হল:
বুখারী শরীফে আছে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সময়ে নয় জন বিবির সঙ্গে সংসার করেছেন, তো আপনারা কেন হাদীসের ওপর আমল করে নয় বিবি নিয়ে সংসার করছেন না?
প্রশ্ন-৮. বুখারী শরীফের সব হাদীস কি আমলযোগ্য, বিশেষ করে যে সব হাদীস নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরবর্তি স্পষ্ট নির্দেশনা দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে? যেমন-
জানার বিষয় হলো, আপনারা এ সব রহিত হাদীসের উপর কিভাবে আমল করেন?
প্রশ্ন-৯. আপনারা শুধু বুখারী শরীফ মানতে চান, তাহলে বুখারী শরীফের স-ব হাদীস মিলিয়েই না হয় দুই রাকাত নামায আদায়ের পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি পেশ করুন।
প্রশ্ন-১০. আপনারা নির্দিষ্ট ইমামের তাকলীদ (অনুসরণ) করাকে শিরক বলে থাকেন, তাহলে এ যাবতকাল যত বড় বড় মুহাদ্দিস হাদীস সংকলন করেছেন, তাফসীরবিদগণ তাফসীর লিখেছেন-তারা সকলেই তো কোন না কোন নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরণ করেছেন, তাহলে তারা সকলেই কি মুশরিক হয়ে গেছেন?
আপনাদের দাবীর আলোকে মাযহাব গ্রহণের শিরক করার কারণে তারা যদি সত্যি সত্যিই ঈমানহারা হয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে আপনারা তাদের কিতাব থেকে হাদীসের দলীল পেশ করেন? এবং কিভাবে তাদের কিতাবের ভিত্তিতে কোন হাদীসকে সহীহ, কোন হাদীসকে যয়ীফ বলেন? এতে কি মুশরিক ও বেঈমানদের কিতাব দ্বারা দলীল দেয়া হয় না?